আজকাল নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্য-তারুণ্য নিয়ে সচেতন অনেকেই। তাই নিয়ম করে বিউটি পার্লার যাওয়া, রূপচর্চা করা, নিজেদের শরীরের যত্ন নেওয়া এখন এক কথায় ট্রেন্ড। অনেকে জিম যাওয়া, ব্যায়াম করা এ সবও করেন নিয়ম করে। কিন্তু সব কিছুর পর যে বিষয়টি প্রায় সকলেই বাদ দিয়ে যান, তা হল খাওয়া-দাওয়া। তারুণ্য বা যৌবন ধরে রাখতে হলে দরকার উপযুক্ত ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবার নিয়মিত খাওয়া। এমন বেশ কিছু পরিচিত খাদ্য রয়েছে, যা খেলে ত্বকের যৌবন ধরে রাখা যায় দীর্ঘ দিন। তেমনই কয়েকটি খাবারের সন্ধান দেওয়া যাক।
তেমন খাবারের তালিকায় রয়েছে – ডিম, দুধ, চিনি ছাড়া চা, মধু, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার, নানান ধরনের ফল, পালং শাক ও নানান সবজি, রসুন, তৈলাক্ত মাছ।
১। ডিম : যৌবন ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার হল, ডিম। তা সে সিদ্ধ হোক কিংবা ভাজা। সব ভাবেই ডিম শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৫ ও বি-৬। এই ভিতামিন বি-৫ ও ৬ শরীরের হরমোনের কার্যক্রম ঠিক রাখে। মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের জলখাবারে একটি করে ডিম খাওয়া উচিত। এতে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়, যৌন ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
২। মধু : মধুর অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। খালি পেটে মধু চেটে খেলে কফ দূর হয়। নিয়ম করে মধু খেলে, পাকস্থলী পরিষ্কার হয়, দেহের অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। বন্ধ গ্রন্থিগুলি খুলে যায়, পাকস্থলী স্বাভাবিক হয়ে যায়, মস্তিষ্ক অতিরিক্ত শক্তি লাভ করে ফলে শরীর সুস্থ থাকে। আবার শরীরের স্বাভাবিক তাপশক্তি বজায় থাকে, সঙ্গে অতিরিক্ত তাপ শক্তি পাওয়া যায়। ফলে শরীর গরম থাকে। তা ছাড়াও মধু খেলে যতি শক্তি বৃদ্ধি হয়, মূত্রথলির পাথর দূর হয়ে যায়। প্রস্রাব স্বাভাবিক হয়, গ্যাসের সমস্যা দূর হয়, খিদে বাড়ায়। শুধু তাই নয়। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত রোগীর জন্যও মধু খুব উপকারী। ফলে এই সব ঠিক থাকলে তারুণ্য বজায় থাকবেই।
৩। দুধ : ছোটোবেলা থেকেই শোনা যায়, শরীর গঠনে ও শক্তি পেতে দুধ অন্যতম। তাই নিয়মিত দুধ খাওয়া দরকার। শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌবন ধরে রাখতে দুধের ভূমিকা অতুলনীয়। দুধ আবার অনেক রকমের হয়। তবে বিশেষ করে ছাগলের দুধ পুরুষের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে অসাধারণ ভুমিকা রাখে। দেহের শুষ্কতা দূর করে, দ্রুত হজম হয়, রতিশক্তি সৃষ্টি করে, বীর্য সৃষ্টি করে, চেহারায় লাল আভা এনে দেয়। দেহের অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ বের করে দেয় এবং মস্তিষ্ক শক্তিশালী করে।
৪। বাদাম ও নানান রকমের বীজ জাতীয় খাবার : কুমড়োর বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে। এই মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের জন্য খুবই দরকারী। এই ধরনের খাবার শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল তৈরি করে। সেক্স হরমোনগুলো ঠিক মতো কাজ করার জন্য কোলেস্টেরল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই প্রতিদিন অল্প করে হলেও বাদাম খাওয়া উচিত। এতে শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও যৌবন দীর্ঘজীবী হয়।
৫। চিনি ছাড়া চা : চায়ে দুধ-চিনি দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই থাকে। এতে চা খেতে অবশ্যই ভালো লাগে। কিন্তু যদি দুধ, চিনি ছাড়া চা প্রতিদিন খাওয়া যায় তা হলে শরীরে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। চা মস্তিষ্ককে সচল করে, রক্ত চলাচল বাড়ায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে পাঁচ কাপ চিনি ছাড়া চা খাওয়া যায়। বিশেষ করে মোটা মানুষদের এই চা শরীরের ওজন কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।
৬। নানান রঙের ফল : শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও যৌবন-তারুণ্য ধরে রাখতে চাইলে প্রতিদিন খাবারের তালিকায় নানান রকমের মরশুমি ও রঙিন ফল রাখা উচিত। আঙুর, কলা, কমলা লেবু, তরমুজ, পিচ ইত্যাদি ফল যৌবন ধরে রাখতে ও যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। এ ক্ষেত্রে একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করা যায়, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের মেডিকেল টিমের গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে একজন পুরুষের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অন্তত পক্ষে ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকা দরকার। এই পরিমাণ ভিটামিন সি স্পার্মের কোয়ালিটি উন্নত করে। আবার টেক্সাসের এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির মতে, তরমুজ শারীরিক উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির –র গবেষকরা ক্ষমতার দিক থেকে যৌন উদ্দীপক ওষুধ ভায়াগ্রার সঙ্গে তরমুজের তুলনা করেছেন।
৭। রসুন : রসুনের উপকারিতার অন্ত নেই। এতে রোগ নিরাময় হয়। রসুন ফোঁড়া, প্রদহ ভালো করে, ঋতুস্রাব চালু করে, প্রস্রাব স্বাভাবিক করে, পাকস্থলী থেকে গ্যাস নির্গত করে। তা ছাড়া কম জোড় নিস্তেজ মানুষের মধ্যে শারীরিক ক্ষমতা সৃষ্টি করে। তা ছাড়াও পুরুষদের মধ্যে বীর্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এর গরম ভাব বীর্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। রসুন পাকস্থলীর ব্যথা কমায়। অ্যাজমা এবং কাঁপুনি রোগেও সমস্যা দূর করে। তবে মনে রাখতে হবে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অধিক রসুন কিন্তু ক্ষতিকর।
৮। পালং শাক ও নানান সবজি : পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। জাপানের গবেষকরা দেখেছেন, শরীরে রক্ত চলাচল বাড়লে শারীরিক উদ্দীপনাও বাড়ে। শরীর সুস্থ রাখতে স্বাভাবিক ভাবেই সব রকমের সাক সবজি খাওয়া দরকার। তাই পালং শাক-সহ অন্যান্য বিভিন্ন রকম শাক, ব্রকলি, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি এগুলোও খাওয়া দরকার। এতে রয়েছে ফলেট, ভিটামিন বি ও অন্যান্য অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এগুলো সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান।
৯। তৈলাক্ত মাছ : তৈলাক্ত মাছে রয়েছে ওমেগা ৩, ফ্যাটি অ্যসিড। এই দুই উপকরণ সুস্থ শারীরিক জীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সামুদ্রিক মাছেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যসিড থাকে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যসিড ডিএইচএ ও ইপিএ শরীরে ডোপামিন বাড়িয়ে দেয়। এর থেকে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা জেগে ওঠে। এ ছাড়াও তৈলাক্ত ও সামুদ্রিক মাছ খেলে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি গ্রোথ হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।