বর্তমানকার দিনে অনেক পুরুষের যৌন জীবন ততোটা সুখকর নয়। এর প্রধান কারণ নিজের মনের দুর্বলতা, অবৈধ যৌনজীবন চর্চা এবং পর্যাপ্ত খাদ্য খাবারের ঘাটতি।আজ আপনার ডক্টরের আর্টিকেল অনুযায়ী খাবার খেলে পুরুষের লিঙ্গ মোটা হয় তার উপর। চলুন শুরু করা যাক।
বেশি পরিমাণ প্রাণিজ-ফ্যাট আছে এ ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য আপনার যৌনজীবনের উন্নতি ঘটায়। যেমন, খাঁটি দুধ, দুধের সর, মাখন ইত্যাদি। বেশিরভাগ মানুষই ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে চায়। কিন্তু আপনি যদি শরীরে সেক্স হরমোন তৈরি হওয়ার পরিমাণ বাড়াতে চান তাহলে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট জাতীয় খাবারের দরকার। তবে সেগুলিকে হতে হবে প্রাকৃতিক এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট।
ঝিনুক–
আপনার যৌনজীবন আনন্দময় করে তুলতে ঝিনুক খাদ্য হিসেবে খুবই কার্যকরী। ঝিনুকে খুব বেশি পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। জিঙ্ক শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং লিবিডো বা যৌন-ইচ্ছা বাড়ায়। ঝিনুক কাঁচা বা রান্না করে যে অবস্থাতেই খাওয়া হোক, ঝিনুক যৌনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অ্যাসপারাগাস–
আপনার যৌন ইচ্ছা বাড়াতে চাইলে যেসব প্রাকৃতিক খাবার শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে সেগুলি খাওয়া উচিত। যৌনতার ক্ষেত্রে সবসময় ফিট থাকতে চাইলে অ্যাসপারাগাস খেতে শুরু করুন।
কলিজা–
অনেকেই কলিজা খেতে একদম পছন্দ করে না। কিন্তু আপনার যৌন জীবনে খাদ্য হিসেবে কলিজার প্রভাব ইতিবাচক। কারণ, কলিজায় প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকে। আর এই জিঙ্ক শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেশি পরিমাণে রাখে। যথেষ্ট পরিমাণ জিঙ্ক শরীরে না থাকলে পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় না। পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে যে হরমোন নিঃসৃত হয় তা টেস্টোস্টেরন তৈরি হওয়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া জিঙ্ক এর কারণে আরোমেটেস এনজাইম নিঃসৃত হয়। এই এনজাইমটি অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরোনকে এস্ট্রোজেনে পরিণত হতে সাহায্য করে। এস্ট্রোজেনও আপনার যৌনতার জন্য প্রয়োজনীয় একটি হরমোন।
ডিম–
ডিম সেদ্ধ হোক কিংবা ভাজি, সব ভাবেই ডিম যৌন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৫ ও বি-৬ আছে যা শরীরের হরমোনের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের সকালের নাস্তায় একটি করে ডিম রাখুন। এতে আপনার শরীর শক্তি পাবে এবং যৌন ক্ষমতা (testosterone) বৃদ্ধি পাবে।
রঙিন ফল–
যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে প্রতিদিন খাবার তালিকায় রঙিন ফলমূল রাখুন। আঙ্গুর, কমলা লেবু, তরমুজ, পিচ ইত্যাদি ফল যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপকারী। ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের মেডিকেল টিমের গবেষণা অনুযায়ী একজন পুরুষের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অন্তত ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকলে তার স্পার্মের কোয়ালিটি উন্নত হয়। আবার টেক্সাসের A&M ইউনিভার্সিটির মতে তরমুজ শরীরে যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে।
মিষ্টি আলু–
মিষ্টি আলু শুধু শর্করার ভালো বিকল্পই না, মিষ্টি আলু খুব ভালো ধরনের একটি ‘সেক্স’ ফুড। আপনার শরীর কোনো সবজিতে বিটা-ক্যারোটিন পেলে তা ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত করে। এই ভিটামিন-এ নারীদের যোনি এবং ইউটেরাসের আকার ভালো রাখে। তাছাড়া এটা সেক্স হরমোন তৈরিতেও সহায়তা করে।
কফি–
কফি আপনার যৌন ইচ্ছা বাড়ানোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কফিতে যে ক্যাফেইন থাকে তা আপনার যৌনতার মুড ঠিক রাখে।
ডার্ক চকোলেট–
ডার্ক চকোলেটে আছে ফেনিলেথ্যালামাইন নামক একটি উপাদান যা শরীরে বাড়তি যৌন উদ্দীপনা তৈরী করে। গবেষণায় জানা গেছে যে ডার্ক চকোলেট খেলে সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণবোধও বেড়ে যায়। এছাড়াও ডার্ক চকোলেটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। তাই প্রতিদিন শতকরা ৭০ ভাগ কোকোযুক্ত ডার্ক চকোলেটের ২ ইঞ্চির একটি টুকরো খেয়ে নিন। মাত্র ১০০ ক্যালরী আছে এই আকৃতির একটি টুকরোতে যা আপনার যৌন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ট্রাফল (এক ধরনের ছত্রাক)–
ট্রাফলে পুরুষের যৌন হরমোনের মত একধরনের উপাদান থাকে। কিছু কিছু খাবারে ট্রাফলের এই বিশেষ কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। যার ফলে, নারীদের পুরুষের প্রতি লিবিডো বা যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়। যেমন ম্যাশড পটেটোতে ট্রাফলের ব্যবহার করা হয়।
জয়ফল–
ভারতীয় গবেষকদের মতে, জয়ফল থেকে এক ধরনের কামোদ্দীপক যৌগ নিঃসৃত হয়। সাধারণভাবে এই যৌগটি স্নায়ুর কোষ উদ্দীপিত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। ফলে আপনার যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। আপনি কফির সাথে মিশিয়ে জয়ফল খেতে পারেন, তাহলে দুইটির কাজ একত্রে পাওয়া সম্ভব।
তৈলাক্ত মাছ–
তৈলাক্ত মাছে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড যা সুস্থ যৌন জীবনের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সামুদ্রিক মাছেও প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড DHA O EPA শরীরে ডোপামিন বাড়িয়ে দেয় এবং মস্তিষ্কে উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। তৈলাক্ত ও সামুদ্রিক মাছ খেলে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং গ্রোথ হরমোনের নিঃসরন হয়। ফলে যৌন স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
অ্যাভোকাডো–
অ্যাভোকাডোকে এর আকৃতির কারণে একে নারী ফল হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। তবে শুধু এর আকৃতিই আকর্ষণীয় না, এতে প্রচুর ভিটামিন বি-সিক্স এবং পটাসিয়াম থাকে। এর ফলে এটা খেলে আপনার যৌন ইচ্ছা এবংযৌন সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। এই ফলের এই নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যটির কারণে একে স্প্যানিশ প্রিস্টরা নিষিদ্ধ করেছিল।
ওটমীল–
ওটমিলে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোস্ট্রোজেন থাকে। যেসব দানাজাতীয় শশ্যে আবরণ থাকে তাদের মধ্যে এই গুণটি রয়েছে। যেমন গম, চাল, রাই ইত্যাদি। ফাইটোস্ট্রজেন আপনার যৌন জীবনের জন্য খুবই কার্যকরী।
পালং শাক ও অন্যান্য সবজি–
পালং শাকে আছে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। জাপানের গবেষকদের মতে শরীরে রক্ত চলাচল বাড়লে যৌন উদ্দীপনাও বাড়ে। পালং শাক ও অন্যান্য বিভিন্ন রকম শাক,ব্রকলি, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি এগুলোতে রয়েছে ফলেট, ভিটামিন বি সহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো সুস্থ যৌন জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান।
বাদাম ও বিভিন্ন বীজ–
কুমড়োর বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, চিনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদিতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট আছে এবং এগুলো শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল তৈরী করে। সেক্স হরমোন গুলো ঠিক মতো কাজ করার জন্য এই কোলেস্টেরল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই প্রতিদিন অল্প করে হলেও বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে আপনার যৌন স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। শিমের বিচিতে প্রচুর ফাইটোস্ট্রোজেন থাকে। এটা আপনার যৌন ইচ্ছা এবং যৌন সামর্থ্য বাড়ায়। জাপানিরা যৌন ইচ্ছা বাড়ানোর জন্য খাবারে প্রচুর শিমের বীচি ব্যবহার করে থাকে। চীনা বাদামে প্রচুর জিঙ্ক থাকে। এই জিঙ্ক শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ায় এবং শক্তিশালী শুক্রাণু তৈরি করে। জিঙ্ক কম থাকলে শরীরে শতকরা ৩০ ভাগ কম বীর্য তৈরি হয়।
যারা খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে কম জিঙ্ক গ্রহণ করে তাদের বীর্য এবং টেস্টোস্টেরনের ঘনত্ব দুটিই কমে যায়। ওটমিল এবং কুমড়ার বীচির মত সূর্যমুখীর বীজ হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষাও বাড়ে। সূর্যমূখীর বীজে যে তেল থাকে তা এই কাজটি করে। কুমড়ার বীচি জিঙ্ক-এর অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক উৎস। এই জিঙ্ক টেস্টোস্টেরোনের (Testosterone)মাত্রা বাড়ায়। আপনার যৌন ইচ্ছা বাড়ানোতে কুমড়ার বীচির কার্যকারিতা অনেক।