রোজ ঘামতে ঘামতে জায়গাটা স্যাঁতস্যাঁতে দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে ওঠে। স্যাঁতস্যাঁতে ভাবের সুযোগ নিয়ে বাসা বাঁধে ব্যাকটেরিয়ার দল।
পুরুষদের গোপনাঙ্গে চুলকুনি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। জনসমক্ষে প্যান্টের উপর হাত দিয়ে ঘ্যাসঘ্যাস করে চুলকানো যেমন দৃষ্টিকটূ, তেমনই এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন উদাসীন থাকলে কঠিন রোগ হওয়া আশ্চর্য নয়। তাই শরীরের সবচেয়ে গোপন অঙ্গ নিয়মতি পরিষ্কার রাখা আবশ্যিক কাজ বৈকি।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক পত্র-পত্রিকায় বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী পুরুষের গোপনাঙ্গে কেন চুলকুনি হয় এবং কী ভাবে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে—
নোংরা থাকা— নিয়মিত গোপনাঙ্গ পরিষ্কার না করা চুলকুনির সব থেকে বড় কারণ। ভারতের মতো নিরক্ষীয় দেশে ঘাম হয় প্রচুর। প্যান্টের নীচে মোটা অন্তর্বাস থাকায় সেখানে কোনও ভাবেই আলো-হাওয়া লাগে না। রোজ ঘামতে ঘামতে জায়গাটা স্যাঁতস্যাঁতে দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে ওঠে। স্যাঁতস্যাঁতে ভাবের সুযোগ নিয়ে বাসা বাঁধে ব্যাকটেরিয়ার দল। ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির জন্যই শুরু হয় চুলকুনি।
এমন চুলকুনি থেকে মুক্তি পেতে গোপনাঙ্গ সাবান দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এখানে গোপনাঙ্গ বলতে পেনিস, অণ্ডকোষ এবং যৌনকেশে ঢাকা তলপেট ছাড়াও কুঁচকি বোঝানো হচ্ছে। অনেকের পেনিসের সামনের চামড়া অর্থাৎ ফোরস্কিনের নীচে সাদা সেডিমেন্ট জমে যায়। সেক্ষেত্রে ফোরস্কিন টেনে পিছন দিকে সরিয়ে ওই সাদা সেডিমেন্ট সাফ করতে হবে।
চ্যাফিং— যাঁরা খুব বেশি হাঁটাচলা বা খেলাধুলো করেন, তাঁদের কুঁচকি লাল হয়ে চুলকুনি শুরু হয়। মূলত ঘর্ষণের ফলে এই সমস্যা তৈরি হয়। একে চ্যাফিং বলে।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গায় ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
অন্তর্বাস না কাচা:নিয়মিত গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করলেই শুধু হবে না, ব্যবহার করতে হবে কাচা অন্তর্বাসও। কারণ, ঘেমো অন্তর্বাস দিনের পর দিন ব্যবহার করলে তাতে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। ফলে, নোংরা অন্তর্বাস থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে সহজেই।
ডিটারজেন্ট দিয়ে অন্তর্বাস কেচে তা ভাল করে শুকিয়ে নিয়ে তবে পরতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার অন্তর্বাস কাচা বাধ্যমূলক। অন্তর্বাস না শুকিয়ে কখনও পরা উচিত নয়।
উকুন— মাথা পরিষ্কার না করলে যেমন উকুন বাসা বাঁধে, তেমনই ঘন যৌনকেশে ঢাকা তলপেটেও উকুন বাসা বাঁধতে পারে। একে বলে পিউবিক লাইস। যদি দেখেন, তলপেটে চুলকুনি হয়েছে এবং যৌনকেশে সাদা পাউডারের মতো জিনিস লেগে রয়েছে, তবে বুঝবেন উকুন হয়েছে। সাদা পাউডারের মতো জিনিস আসলে উকুনের ডিম। এই সমস্যা সাধারণত কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির অন্তর্বাস, তোয়ালে, বিছানা, শৌচালয় ব্যবহার করলে হয়।
যৌনকেশ পরিষ্কার করুন এবং অন্য ব্যক্তির অন্তর্বাস, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
জক ইচ— ছত্রাক সংক্রমণের ফলে এই রোগ হয়। জক ইচের ক্ষেত্রে গোপনাঙ্গ খুব চুলকোয়, চুলকুনির জায়গা থেকে রস কাটতে থাকে এবং দুর্গন্ধ বেরোয়। ত্বক লাল হয়ে ওঠে।
গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি অ্যান্টি ফাংগাল ক্রিম লাগাতে হবে।
স্কেবিস— গোপনাঙ্গে এক ধরনের আণুবীক্ষণিক পোকা বাসা বাঁধলে এই রোগ হয়। এদের মাইটস বলে। স্কেবিস হলে গোপনাঙ্গ খুব চুলকোয়, লাল অথবা কালচে লাল ফুসকুড়ি বেরোয়। রাতে চুলকুনি বেশি হয়। এই রোগের সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হল, চিকিৎসা না করালে তা নিতম্ব দেশ, উরু এবং পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগটি ছোঁয়াচে।
স্কেবিস হলে নিজে ডাক্তারি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভাল।
যৌনরোগ বা এসটিডি— জেনিটাল হার্পিস, ক্ল্যামিডিয়া, ট্রাইকোমোনিয়াসিস এবং গনোরিয়া হলেও গোপনাঙ্গ চুলকোতে পারে। প্রতিটি রোগই যথেষ্ট পীড়াদায়ক। একাধিক মহিলার সঙ্গে অসুরক্ষিত সেক্স করা কিংবা সংক্রামিত ব্যক্তির অন্তর্বাস, তোয়ালে ব্যবহার করার কারণে এই রোগ হতে পারে। এমনকী, সংক্রামিত ব্যক্তির শৌচালয়ও ব্যবহার না করা উচিত।
এ ধরনের রোগের ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কারণ, রোগ ফেলে রাখলে প্রস্রাবে সমস্যা থেকে শুরু করে শুক্রাণুর গুণমান খারাপ হওয়া ইত্যাদি নানা সঙ্কট তৈরি হতে পারে.