ইনফেকশনজনিত পুরুষ বন্ধ্যত্বের পর স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় আসে হরমোনজনিত পুরুষ বন্ধ্যাত্ব। মোট বন্ধ্যত্বের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে পুরুষ বন্ধ্যত্ব, এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে নারী বন্ধ্যত্ব এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে উভয়ের বন্ধ্যত্ব হয়ে থাকে। বিবাহিত দম্পতিদের ক্ষেত্রে শতকরা প্রায় ১৫ ভাগ বন্ধ্যত্বজনিত সমস্যা থাকে। শতকরা ৮০ ভাগ দম্পতির বেলায় দেখা গেছে, এক বছর ধরে কোনো রকম জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া মিলনের ফলে গর্ভসঞ্চার হয়। এই সময়ের পর গর্ভসঞ্চার না হলে বন্ধ্যত্বের কথা চিন্তা করতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
পুরুষ বন্ধ্যত্বের কারণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করলে দেখা যায়, চিকিৎসার মাধ্যমে কিছু কিছু বন্ধ্যত্বের সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব, কিছু বন্ধ্যত্বের কখনো কখনো আরোগ্য সম্ভব এবং আর কিছু বন্ধ্যত্বের কোনোমতেই ভালো করা সম্ভব নয়।
যেসব বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য করা সম্ভব :
যেমন- ভেরিকোসিল, শুক্রনালীর পথে বিদ্যমান কোনো বাধা বা ব্লকেজ (জন্মগত/যে কোনো সময়ের) ইনফেকশন, রেতঃপাতজনিত সমস্যা, হরমোনজনিত রোগ, প্রতিরোধজনিত, যৌন সমস্যাজনিত, প্রলেকটিন হরমোনের রক্তের মাত্রা বৃদ্ধিজনিত বন্ধ্যত্ব।
যেসব বন্ধ্যত্ব কখনো কখনো চিকিৎসা করা সম্ভব :
যেমন- ১. কারণ অজানা, ২. জন্মের সময় অ-কোষ অ-থলিতে না থাকা, ৩. সেক্সগ্রন্থির জন্য ক্ষতিকর ওষুধ, রেডিয়েশনজনিত বন্ধ্যত্ব। আর যেসব পুরুষ বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা করা আদৌ সম্ভব নয় সেগুলোর কারণের মধ্যে রয়েছে জন্মগতভাবে দু’টো অ-কোষই না থাকা, অ-কোষের শুক্র উৎপাদক কোষের অনুপস্থিতি, প্রাথমিক টেস্টিকুলার ফেইল্যুর (প্রথম থেকেই শুক্র উৎপাদন না হওয়া), ক্রোমোজোমাল, বৈকল্য ইত্যাদি।
হরমোনজনিত বন্ধ্যত্ব :
বেশির ভাগ পুরুষ বন্ধ্যত্বই হরমোনজনিত নয়। হরমোনজনিত কারণ তখনই বিবেচনা করতে হবে যখন ঘনত্ব এবং সংখ্যা অত্যন্ত কম কিংবা বাহ্যিকভাবে হরমোনজনিত অন্যান্য আনুষঙ্গিক লক্ষণ দেখা দেয়। প্রাথমিক হরমোনজনিত কারণ শতকরা ৩ ভাগের কম পুরুষ বন্ধ্যর ক্ষেত্রে থাকতে পারে। যাদের শুক্রের সংখ্যা প্রতি সিসিতে ৫০ মিলিয়েনের বেশি তাদের হরমোনজনিত কারণ একেবারেই বিরল। যেসব পুরুষের জন্মগত ত্রুটি, দেরিতে যৌবন শুরু হওয়া কিংবা অতি তাড়াতাড়ি যৌবনের লক্ষণ দেখা দেয়া, পুরুষাঙ্গের উত্থানরহিত সমস্যা অথবা যৌন আকাক্সক্ষা না থাকা বা কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তাদের ক্ষেত্রেই কেবল হরমোনজনিত কারণ চিন্তা করতে হবে। ক্ষুদ্র অ-কোষ, পুরুষ ব্রেস্ট বৃদ্ধি পাওয়া, দাড়ি-গোঁফ না থাকা ও মেয়েলি লক্ষণ থাকলে হরমোনজনিত কারণ বিবেচনায় আনতে হবে। হরমোনজনিত কারণ নির্ণয়ের জন্য রক্তের যেসব হরমোন মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত সেগুলো হচ্ছে টেস্টোসটেরন এবং প্রলেকটিন। এগুলোর স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক ইত্যাদি বিবেচনা করে কারণ নির্ণয় করা সম্ভব। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেয়া বাঞ্ছনীয়। তাহলেই কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া সম্ভব।
বন্ধ্যাত্বের কিছু তথ্য :
(১) কাদের বন্ধ্য বলা যাবে! যারা সন্তান নিতে ইচ্ছুক এমন দম্পতির ক্ষেত্রে এক বছর সহবাসের পরেও কোনো লক্ষণ দেখা না গেলে তাদেরকে বন্ধ্য বলা যায়। তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
(২) স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই পরীক্ষা করা উচিত। তা না হলে কোন সমস্যার কারণে সন্তান হচ্ছে না তা নির্ণয় করা যাবে না।
(৩) প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে বন্ধ্যত্বের কারণ বের করা সম্ভব।
(৪) সম্ভাব্য কারণ: মেয়েদের ক্ষেত্রে হরমোন জাতীয় জটিলতায় ফেলোপিয়ান টিউব বা জরায়ুতে সংক্রমণ।
(৫) শতকরা ৬০-৬৫ শতাংশ বন্ধ্যত্ব এক বছরের মধ্যে ভালো হয়ে যেতে পারে।
(৬) মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩৮ বছরের পর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ৪৫-৫০ বছরের পর চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
(৭) বন্ধ্যত্বের পরিসংখ্যান : প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ নির্বীর্য, ৪৫ জন মহিলা বন্ধ্য। নারী-পুরুষ মিলিত হার ১৫ শতাংশ, দম্পতির কোনো দোষ নেই অথচ বন্ধ্য শতকরা ৫ ভাগ।