জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আছে সমস্যা আছে তার সমাধান।মানুষের যৌন জীবনে ও রয়েছে নানা রকম যৌন সমস্যা এবং সেই যৌন সমস্যার ও রয়েছে সমাধান।
প্রতিটি মানুষই জন্মগতভাবে যৌবনের অধিকারী। জীবনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে এই যৌবন মানুষের জীবনে আসে। এই সময়টাই মানুষের জীবনে সবচেয়ে মূল্যবান সময়। এই সময়ে নারী ও পুরুষের দেহ-মনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এসময় একই সাথে নারী ও পুরুষদের নানা ধরনের যৌন সমস্যাজনিত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে।
যৌন সমস্যার অর্থ ব্যাপক হতে পারে। যৌন মিলনে সমস্যা, পুরুষ বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি সব কিছুই যৌন সমস্যার কারণে হতে পারে। কাজেই আপনি যৌন সমস্যা বলতে ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন সেটা না জানলে উত্তর দেওয়া মুশকিল।
নিম্নে কয়েকটি যৌন সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলো-
১. পুরুষদের যৌন সমস্যার সম্মন্ধে কথা বলতে গেলে প্রথমেই যেটা মনে আসে তা হল দ্রুত বীর্যস্খলন। পৃথিবীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ পুরুষরা জীবনে কোন না কোন সময়ে যৌন সমস্যায় পড়ে থাকে।তবে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত বীর্যস্খলন থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
২. বীর্যস্খলন বিপরীত একটি যৌন সমস্যা হল বিলম্বিত বীর্যস্খলন। এক্ষেত্রে বীর্যস্খলন হতে অত্যধিক বিলম্ব হয় যা দুজন সঙ্গীর পক্ষেই অসুবিধাজনক। সঙ্গিনীর প্রতি আকর্ষনের অভাব, বা অন্য কোন কারণে যৌনসঙ্গমে অপরাগ, স্নায়ুতে আঘাত, কিছু কিছু ওষুধের (medicine) পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফলে এই সমস্যা হতে পারে। সঠিক কারণ চিহ্নিত করতে পারলে বিলম্বিত বীর্যস্খলন নামক এই যৌন সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
৩. যৌন সমস্যাজনিত অপর একটি গুরুতর ব্যাপার হল যৌন অনুভূতি কমে যাওয়া। এক্ষেত্রে বীর্যস্খলনের সময় বীর্য মূত্রনালী দিয়ে বের হওয়ার পরিবর্তে মূত্রথলীতে প্রবেশ করে। ফলে হস্তমৈথুন বা যৌনসঙ্গমের সময় অর্গ্যাজম হলেও বীর্য বের হয় না। মূত্রথলীর স্ফিংটার পেশী ঠিকমত কাজ না করলে এই ধরণের যৌন সমস্যা হয়। যৌন অনুভূতি পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের একটি সম্ভাব্য কারণ। রোগের উপর নির্ভর করে ওষুধের মাধ্যমে এই সমস্যার চিকিৎসা করা যায়।
৪. আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছেলেদের যৌন সমস্যা হল ধ্বজভঙ্গ বা impotency। এইরোগে লিঙ্গ একেবারেই উত্তেজিত হয় না বা হলেও স্বল্প সময়েই শিথীল হয়ে যায়। প্রায় ৪০ শতাংশ পুরুষ জীবনের কোন না কোন সময় এই যৌন সমস্যায় উপনীত হয়। এই রোগের আধুনিক নাম ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ইডি)। নানাবিধ শারীরিক বা মানসিক কারণে এই সমস্যা হতে পারে। শারীরিক কারণসমূহ হলো মূলত হৃদরোগ, মধুমেহ, হরমোনের সমস্যা, স্নায়বিক দুর্বলতা, বয়সজনিত অন্যান্য অসুখ, নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ, ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, যৌনাঙ্গে আঘাত ইত্যাদি। মানসিক কারণসমূহ মধ্যে দুঃশ্চিন্তা, মানসিক রোগ, ইত্যাদি। তবে সুচিকিৎসায় এই রোগের নিরাময় সম্ভব। এছাড়াও নিয়মিত শারীরিক কসরত, বিশেষত এরোবিক এক্সারসাইজ বিশেষ উপকারী। তবে যদি মনে হয় যে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সমস্যা হচ্ছে তাহলে সত্ত্বর কোন ভাল ইউরোলজিস্ট বা সেক্সোলজিস্টের পরমর্শ নেওয়া উচিত । উনি যথাযথ পরীক্ষা করে দেখবেন যে ধ্বজভঙ্গের কারণ শারীরিক না মানসিক এবং সেই অনুসারে চিকিৎসাও করবেন।
৫. যৌন সমস্যাজনিত আরেকটি সমস্যা হলো পুরুষদের যৌনক্ষুধা কমে যাওয়া। মূলত শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়। তবে অনেক সময় মানসিক অবসাদ, দুঃশ্চিন্তা, মধুমেহ, অস্বাভাবিক রক্তচাপ ইত্যাদির ফলেও যৌনইচ্ছা কমে যেতে পারে। চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের (sexologist) সাথে পরামর্শ করা উচিত। তবে দেখা যায় যে শারিরীক কসরত্ করলে যৌনইচ্ছা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এগুলো বাদ দিলেও পুরুষদের বিভিন্ন যৌনরোগ যেমন এইচ.আই.ভি., গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি যৌনমিলনে জটিলতা সৃষ্টি করে থাকে। মূত্রপাথুরীও কোন যৌনরোগ নয়, ওটা কিডনী ও মূত্রনালীর সমস্যা যার জন্য নেফ্রোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত।