প্রিয় জনকে নিবিড় করে কাছে পাওয়া, রতিক্রীড়ায় পরস্পরের মন বুঝে নেওয়ার আবেগ, ভালবাসার চরম প্রকাশ- এ সবই যৌন সম্পর্কের শেষ কথা? চিকিত্সা বিজ্ঞান কিন্তু সে কথা বলছে না। বরং বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের দাবি, যে সব শারীরিক সম্পর্কে মনও যুক্ত থাকে, সেখানে কেবল রতিক্রীড়ার আনন্দ বা উপভোগটুকুই শেষ কথা নয়, বরং এমন যৌনতায় হয় কিছু শারীরিক লাভও। সুখী যৌন জীবন কেবল সম্পর্ককেই তরতাজা রাখে তা নয়, শরীরকেও তুলনামূলক ভাবে অনেক সুস্থ রাখে।
রোগ দূরে রাখাই শুধু নয়, মেদ কমানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সক্ষম সুস্থ যৌন সম্পর্ক। জানেন কি, নিয়মিত সুস্থ যৌন সম্পর্ক কী কী শারীরিক উপকারও করে? ওবেসিটি কমায় সুস্থ যৌনতা রক্তে অক্সিটোসিনের মাত্রা বাড়ায়, যা সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়। এর সঙ্গে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের পরিমাণ কমে যায়। ফলে মন উদ্বেগমুক্ত হয়। মানসিক চাপ কমায়, শরীরে মেদের পরিমাণও কমে। এ ছাড়া যৌনতার সময় যেটুকু শ্রম ও উত্তেজনা তৈরি হয়, তাতেও মেদ কমে। রোগ প্রতিরোধ বিভিন্ন দেশে নানা গবেষণায় প্রমাণ, সপ্তাহে দু’দিন যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বিভিন্ন রোগের জীবাণু, ব্যাকটিরিয়া যাতে শরীরে বাসা না বাঁধতে পারে সে কাজটাই করে অ্যান্টিবডি। তাই সর্দিকাশি, জ্বর, কোনও প্রদাহ এ সব রুখে দেওয়া যায় সহজেই। ঘুম শারীরিক সম্পর্কে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের পরিমাণ কমে যায় বলে মানসিক চাপ কমে ও গাঢ় ঘুম আসে।
শরীর আর মন, দুইই শান্ত হওয়ার কারণে ঘুমও আসে তাড়াতাড়ি। তাই ঘুমের ওষুধের কাজটা অনেকটাই করে দিতে পারে সুস্থ যৌনতা। ত্বকের জৌলুশ শরীরে-শরীরে ঘনিষ্ঠতা রক্ত সংবহন বাড়িয়ে তোলে। ফলে ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ হয় বেশি। যৌন সম্পর্কে যেটুকু ঘাম হয়, তার মাধ্যমে শরীরের টক্সিনও দূর হয়। এ সব কারণে ত্বক জেল্লাদার হয় ও তার জৌলুশও বাড়ে। হাড় সুস্থ নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কে থাকলে শরীরে ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। ফলে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হাড়ের জোর বাড়ে। পেশীকে টানটান ও সতেজ রাখতেও সাহায্য করে যৌনতা। বেদনানাশক শারীরিক ভাবে ঘন হওয়া, ফোরপ্লে বা সঙ্গমের ফলে শরীরে যে সব রাসায়নিক ক্রিয়া হয় তাতে ডোপামিন, এন্ডরফিন ও সেরোটোনিনের মতো ফিল গুড হরমোনরা ক্ষরিত হয়।
এরা রক্তের সঙ্গে মিশে ব্যথা-বেদনা দূর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পিরিয়ডের ক্রাম্প, মাইগ্রেনের মতো অসুখকেও অনেকটা কব্জা করা যায় এর প্রভাবে। হৃদযন্ত্র সুস্থ ‘সেক্সারসাইজ’। বিদেশে এক্সারসাইজের সঙ্গে এই পদও সম্প্রতি খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। চিকিত্সকদের মতে, যে কোনও হালকা ব্যায়ামে শরীরে যে হৃদগতি থাকে, যৌন সম্পর্কের সময়ও তা-ই থাকে। এতে শরীর যে পরিমাণ ক্যালোরি ত্যাগ করে তা সাধারণত ২০ মিনিট হাঁটার সমান। তাই হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতাকে আরও উন্নত করে যৌন সম্পর্ক।