দ্রুত বীর্যপাত
পুরুষদের যে সকল যৌন সমস্যা পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো অকাল বীর্যপাত বা দ্রুত বীর্যপাত । যৌনমিলনের সময় পুরুষের দ্রুত বীর্যপাতকে অকাল বীর্যপাত বা দ্রুত বীর্য স্খলন বলা হয়, যাকে ইংরেজিতে বলে প্রিম্যাচিওর ইজাকিউলেশন (Premature Ejaculation)। প্রতি তিনজন পুরুষের মধ্যে একজনকে এ সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। স্ত্রী যোনীতে পুরুষাঙ্গ প্রবেশের পর অঙ্গ চালনার পরিণতি হিসেবে বীর্যপাত হয়ে থাকে। কতক্ষণ পর বীর্যপাত হবে তার কোন সুনির্দ্দিষ্ট বা আদর্শ সময় নেই। তবে নিয়মিত যদি যোনীতে লিঙ্গ প্রবেশের পূর্বে বা অব্যবহিত পরেই বীর্যপাত হয়ে যায়, তবে তা দ্রুতস্খলন সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হবে। এর ফলে পুরুষ প্রযোজনীয় সময় ধরে অঙ্গচালনার সুখ থেকে বঞ্চিত হয়। অপর দিকে পুরুষাঙ্গ নেতিয়ে পড়ে বলে স্ত্রীর চরমানন্দ বা নারীর অর্গাজম লাভের আগেই সঙ্গমের সমাপ্তি হয়।
দ্রুত বীর্যপাতের কারণ
কী কারণে অকাল বীর্যপাত হচ্ছে তা নিরূপণ করতে বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় ধারণা করা হতো যে সমস্যাটি সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে আমরা জানি, দ্রুত বীর্যপাত হওয়া একটি জটিল ব্যাপার এবং এর সাথে মানসিক ও জৈবিক মানসিক কারণ।
কিছু চিকিৎসক বিশ্বাস করেন, প্রাথমিক বয়সে যৌন অভিজ্ঞতা ঘটলে তা এমন একটি ধরনে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, পরবর্তী জীবনে সেটা পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে। যেমন¬
১। লোকজনের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য তড়িঘড়ি করে চরম পুলকে পৌঁছানোর তাগিদ।
২। অপরাধ বোধ, যার কারণে যৌনক্রিয়ার সময় হঠাৎ করেই বীর্যপাত ঘটে যায়।
৩। অন্য কিছু বিষয়ও আপনার দ্রুত বীর্যপাত ঘটাতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে¬ পুরুষত্বহীনতা যেসব পুরুষ যৌনমিলনের সময় তাদের লিঙ্গের উত্থান ঠিকমতো হবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন, কিংবা কতক্ষণ লিঙ্গ উত্থিত অবস্থায় থাকবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন সেসব পুরুষের দ্রুত বীর্যস্থলন ঘটে।
৪। দুশ্চিন্তা। অনেক পুরুষের দ্রুত বীর্যপাতের একটি প্রধান কারণ দুশ্চিন্তা। সেটা যৌনকাজ ঠিকমতো সম্পন্ন করতে পারবেন কি না সে বিষয়ে হতে পারে। আবার অন্য কারণেও দুশ্চিন্তা হতে পারে।
৫। অতিরিক্ত উত্তেজনা। সাধারণত প্রথম যৌনমিলনের পূর্বে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তাই প্রথম যৌনমিলনকালে পুরুষের অকাল বীর্যপাত হয়ে থাকে।
জৈবিক কারণঃ
বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, কিছুসংখ্যক জৈবিক বা শারীরিক কারণে দ্রুত বীর্যপাত ঘটতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছেঃ
• হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রা
• মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান বা নিউরোট্রান্সমিটারের অস্বাভাবিক মাত্রা
• বীর্যস্খলন ব্যবস্থার অস্বাভাবিক ক্রিয়া
• থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা
• প্রোস্টেট অথবা মূত্রনালীর প্রদাহ এবং সংক্রমণ
• বংশগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
• সার্জারি কিংবা আঘাতের কারণে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হওয়া।
• নারকোটিকস বা মাদক কিংবা দুশ্চিন্তার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ট্রাইফ্লুপেরাজিন প্রত্যাহার করা এবং অন্য মানসিক সমস্যা থাকা।
• নারীদের তুলনায় যদিও পুরুষের যৌন ক্ষমতা বেশি থাকে কিন্তু দুশ্চিন্তার ফলে বিপরীত হতে পারে।
দ্রুত বীর্যপাত সমস্যার সমাধান বা চিকিৎসা
দ্রুত বীর্যপাত সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক ধরনের পদ্ধতি পরীক্ষা করা হয়েছে। ঔষধসহ এবং ঔষধ ব্যতীত, উভয় রকম পদ্ধতির সমন্বয় করে চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে সবচেয়ে ভালো হয় একজন অভিজ্ঞ যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার (Sexologist Doctor) এর সাথে পরামর্শ করে চিকিৎসা গ্রহণ করা। কালুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে আপনি দ্রুত বীর্যপাত সমস্যার সমধান করতে পারবেন –
নিজে নিজে চিকিৎসাঃ
যৌন মিলনের সময় অনেক পুরুষ তাদের নিজেদেরকে মনো্যোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যান। যেমন যৌন উদ্দীপনা থেকে তাদের মনোযোগকে অন্য বিষয়ে ফোকাস করার চেষ্টা করেন। তবে এই পদ্ধতি খুব সামান্যই কার্যকর এবং এতে স্বামী স্ত্রী কারোই যৌনতৃপ্তি হয় না।। অন্যান্য স্ব- চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে রয়েছে, যোনিতে ধীরে ধীরে লিঙ্গ প্রবেশ করানো, বা সম্পূর্ণরূপে লিঙ্গ বের করে নিয়ে আসা, যৌনমিলনের আগে হস্তমৈথুন করে বীর্য ফেলে দেওয়া, এবং একাধিক কনডম ব্যবহার করা ইত্যাদি পদ্ধতি প্রচলইত আছে। একাধিক কনডম ব্যবহার করা হলে ঘর্ষণজনিত কারনে পুরুষাঙ্গের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে।
বর্তমান সময়ে, সাথে বেশিরভাগ পুরুষ তার নিজের অংশীদারের সাথে মিলে দ্রুত বীর্যপাত সমস্যার সমাধান নিজেরাই করতে পারেন। শুধুমাত্র অস্বাভাবিক গুরুতর সমস্যায় আক্রান্তদের সেক্স থেরাপিস্টদের সাথে পরামর্শ করতে হয়েছিল তাদের ৭৫% থেকে ৮০% নিরাময় লাভ করে।
সেক্স থেরাপিঃ
সেক্স থেরাপিস্টগন বেশ কয়েকটি কৌশল আবিষ্কার করেছে এবং এগুলো প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কেগেলের ব্যায়াম (Kegel Excercise)। এতে ব্যায়ামের মাধ্যমে তলপেটের পেশীকে শক্তিশালী করা হয়। অপর একটি পদ্ধতি “মাস্টার্স এবং জনসন” এর “স্টপ-স্টার্ট টেকনিক”। এবং সর্বশেষ “স্কুইজ টেকনিক”। “স্কুইজ টেকনিক” পদ্ধতিতে বীর্য স্খলনের পূর্ব মুহুর্তে পুরুষদের যৌনাঙ্গের মাঝখানে ধরে ফেলার কৌশল নারীদের শেখানো হয়। তবে সকল ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ করেনি।
পরবর্তীতে যৌন থেরাপিস্টরা “স্টপ-স্টার্ট কৌশল” নামে সরল এবং আরও কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যৌনসম্পর্কের সময়, যখন পুরুষের চূড়ান্ত উত্তেজনার সময় চলে আসে, তখন উভয় অংশীদাররা থেমে যায় এবং বীর্য স্খলনের সম্ভাবনা কমে যাওয়ার পরে আবার যৌন ক্রিয়া শুরু করেন। এই কৌশলটি বেশির ভাগ মানুষের জন্য কাজ করে।
তবে সমস্যা খুব বেশি হলে আপনি অবশ্যই একজন যৌন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। যৌন সমস্যার সমাধান এর জন্য সবচেয়ে ভালো হচ্ছে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা (Ayurveda For Sex) যেটি আপনার যৌন ক্ষমতা প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি করে এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় কোনো সাইড ইফেক্ট নেই।